দীর্ঘ ৫৭ বছর বাংলাদেশে বসবাস করে এদেশের মানুষের সেবায় নিবেদিত মহৎপ্রাণ ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন হল্টকে ৩১ মার্চ ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ হস্তান্তর করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব জনাব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জন হল্ট ও ফ্রান্সিস হল্টের মেয়ে লুসির জন্ম ব্রিটিশ শহর সেন্ট হেলেন্সে ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কোল হিলস জুনিয়র স্কুলের শিক্ষকতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে মানবতার সেবায় অনুপ্রাণিত হন এবং নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। লুসি হেলেন শৈশবের পর থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। মানবতার সেবার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে আসেন। ওই বছরেই লুসি হেলেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে যোগদান করেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতে শুরু করেন। এরপর তিনি আর নিজের দেশে ফেরেননি এবং এই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার আকর্ষণে বাংলাদেশেই অবস্থান করেন। পরে তিনি যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে ৫৭ বছর ধরে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসরে যান এবং ওই বছরেই বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে ফিরে যান। অবসরজীবনে লুসি এখন দুস্থ শিশুদের ইংরেজি শেখাচ্ছেন এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি লুসি দুস্থ শিশুদের জন্য সম্পদশালী লোকদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
লুসি হেলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে যুদ্ধকালে তিনি যুদ্ধাহত লোকদের সেবা করেছেন। এ সময় লুসি যশোর ক্যাথলিক চার্চে কাজ করছিলেন, সেখানে তিনি শিশুদের ইংরেজি শেখাতেন। যুদ্ধ শুরু হলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খুলনা চলে যান। মানুষের জীবন যখন বিপণ্ন, সেই বিপদের মধ্যেও তিনি নিকটবর্তী ফাতেমা হাসপাতালে ছুটে যান এবং যুদ্ধাহত সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা দিতে চেয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা একজন বিদেশি নাগরিকের আগ্রহ দেখে বিস্মিত হন এবং দ্রুত সম্মতি দেন। এরপর তিনি যুদ্ধাহত মানুষদের সেবা করে আসছেন।
মৃত্যুর পর লুসি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত হতে চেয়েছিলেন এবং এই দেশের নাগরিকত্বের জন্য গত ২২ জানুয়ারি বরিশালের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানান এবং তাঁর আবেদনটি মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। সব প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর বাংলাদেশের জন্য তাঁর অবদানের কথা বিবেচনা করে সরকার ২২ মার্চ তাঁকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। এর ফলে লুসি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সব সুবিধা পাবেন এবং ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবেও তাঁর সব রকম সুবিধা বজায় থাকবে।